Anup Bandyopadhyay Website Logo
ads1-728x90

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর– স্বদেশ, স্বাধীনতা ও আমরা – পর্ব – ০৪

উদ্ধৃতি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর– স্বদেশ, স্বাধীনতা ও আমরা —- পর্ব ( ৪ )
============================================

উদ্ধৃতি - - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - স্বদেশ, স্বাধীনতা ও আমরা। [ পর্ব - ০৪]

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বদেশ, স্বাধীনতা ও আমরা– এই ভাবনাকে কিছুটা হলেও বুঝতে চেষ্টা করছি আমরা তাঁর প্রবন্ধ উদ্ধৃতির মাধ্যমে। ইতিমধ্যে আমরা তিনটি পর্ব সম্পূর্ণ করেছি। আজ চতুর্থ পর্ব। আজ আমরা আরও চারটি উদ্ধৃতি পড়বো।
প্রতিটি উদ্ধৃতি সাথে থাকছে মুল প্রবন্ধ ও গ্রন্থের উল্লেখ।
আজকের উদ্ধৃতি:—–
১) স্বরাজ সৃষ্টি: স্বরাজ তো একমাত্র আমাদের বস্ত্রস্বচ্ছলতার উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। তার যথার্থ ভিত্তি আমাদের মনের উপর, সেই মন তার বহুধাশক্তির দ্বারা এবং সেই আত্মশক্তির উপর আস্থার দ্বারা, স্বরাজ সৃষ্টি করতে থাকে। এই স্বরাজ সৃষ্টি কোনো দেশেই তো শেষ হয়নি —- সকল দেশেই কোনো-না কোনো অংশে লোভ বা মোহের প্ররোচনায় বন্ধনদশা থেকে গেছে। কিন্তু সেই বন্ধনদশার কারণ মানুষের চিত্তে। সে-সকল দেশে নিরন্তর এই চিত্তের উপর দাবি করা হচ্ছে। আমাদের দেশেও সেই চিত্তের বিকাশের উপরেই স্বরাজ দাঁড়াতে পারবে। তার জন্যে কোনো বাহ্য ক্রিয়া বাহ্য ফল নয়, জ্ঞান বিজ্ঞান চাই।দেশের চিত্তপ্রতিষ্ঠিত এই স্বরাজকে অল্পকাল কয়েকদিন চরকা কেটে আমরা পাব, এর যুক্তি কোথায়!
( কালান্তর/ সত্যের আহ্বান )

রবীন্দ্র প্রবন্ধ উদ্ধৃতি– স্বদেশ, স্বাধীনতা ও আমরা (পর্ব – ০২)

২) স্বদেশ প্রেম:– কোনো প্রীতিই সম্পূর্ণ অকৃত্রিম ও পরিপক্ক হইতেই পারে না, যদি তাহা প্রত্যক্ষ জ্ঞানের উপরে প্রতিষ্ঠিত না হয়। ভালোবাসা অক্লান্ত যত্নে জানিতে ইচ্ছা করে এবং জানা হইলে ভালোবাসা আরও সত্য ও সুগভীর হয়। আমাদের স্বদেশপ্রেমের সেই ভিত্তির অভাব আছে এবং আমাদের মনে সেই ভিত্তিরচনার জন্য যদি দুর্নিবার আগ্রহ উপস্থিত না হয় তবে যেন আমরা স্বদেশপ্রেমের অভিমান না করি। যদি এই প্রেমের অভিমানী হইবার প্রকৃত অধিকার আমরা না লাভ করিতে পারি তবে স্বদেশ আমাদের স্বদেশ নহে। জ্ঞানের দ্বারা, প্রেমের দ্বারা, সেবার দ্বারা, পরিপূর্ণ ব্যবহারের দ্বারাই অধিকার লাভ করা যায়। জগতে যে জাতি দেশকে ভালোবাসে সে অনুরাগের সহিত স্বদেশের সমস্ত সন্ধান নিজে রাখে, পরের পুঁথির প্রত্যাশায় তাকাইয়া থাকে না; স্বদেশের সেবা যথাসাধ্য নিজে করে, কেবল পরের কর্তব্যবোধকে জাগ্রত করিবার উপায় সন্ধান করে না; এবং দেশের সমস্ত সম্পদকে নিজের সম্পূর্ণ ব্যবহারে আনিতে চেষ্টা করে, বিদেশি ব্যবসায়ীর অশুভাগমনের প্রতীক্ষায় নিজেকে পথের কাঙাল করিয়া রাখে না। তাই আজ আমি আমাদের ছাত্রগণকে বলিতেছি, দেশের উপরে সর্বাগ্রে সর্বপ্রযত্নে জ্ঞানের অধিকার বিস্তার করো, তাহার পরে প্রেমের এবং কর্মের অধিকার সহজে প্রশস্ত হইতে থাকিবে।
( সাহিত্য/ সাহিত্য সম্মিলন)

৩) স্বদেশি কর্মক্ষেত্র: — একটি বৃহৎ স্বদেশি কর্মক্ষেত্র আমাদের আয়ত্তগত না থাকিলে আমাদিগকে চিরদিনই দুর্বল থাকিতে হইবে, কোনো কৌশলে এই নির্জীব দুর্বলতা হইতে নিষ্কৃতি পাইব না। যে আমাদিগকে কর্ম দিবে সেই আমাদের প্রতি কর্তৃত্ব করিবে, ইহার অন্যথা হইতেই পারে না— যে কর্তৃত্ব লাভ করিবে সে আমাদিগকে চালনা করিবার কালে নিজের স্বার্থ বিস্মৃত হইবে না ইহাও স্বাভাবিক। অতএব সর্বপ্রযত্নে আমাদিগকে এমন একটি স্বদেশি কর্মক্ষেত্র গড়িয়া তুলিতে হইবে যেখানে বিদ্যালয়ের শিক্ষিতগণ শিক্ষকতা, পূর্তকার্য, চিকিৎসা প্রভৃতি দেশের বিচিত্র মঙ্গলকর্মের ব্যবস্থায় নিযুক্ত থাকিবেন। আমরা আক্ষেপ করিয়া থাকি যে , আমরা কাজ শিখিবার ও কাজ দেখাইবার অবকাশ না পাইয়া মানুষ হইয়া উঠিতে পারি না। সে অবকাশ পরের দ্বারা কখনোই সন্তোষজনকরূপে হইতে পারে না, তাহার প্রমাণ পাইতে আমাদের বাকি নাই।
( আত্মশক্তি / সফলতার সদুপায় )

৪ ) স্বদেশি সমাজ :– আমাদের দেশে যুদ্ধবিগ্রহ, রাজ্যরক্ষা এবং বিচারকার্য রাজা করিয়াছেন, কিন্তু বিদ্যাদান হইতে জলদান পর্যন্ত সমস্তই সমাজ এমন সহজভাবে সম্পন্ন করিয়াছে যে, এত নব নব শতাব্দীতে এত নব নব রাজার রাজত্ব আমাদের দেশের উপর দিয়া বন্যার মতো বহিয়া গেল ,তবু আমাদের ধর্ম নষ্ট করিয়া আমাদিগকে পশুর মতো করিতে পারে নাই, সমাজ নষ্ট করিয়া আমাদিগকে একেবারে লক্ষ্মীছাড়া করিয়া দেয় নাই। রাজায় রাজায় লড়াইয়ের অন্ত নাই —- কিন্তু আমাদের মর্মরায়মাণ বেণুকুঞ্জে , আমাদের আমকাঁঠালের বনচ্ছায়ায় দেবায়তন উঠিতেছে, অতিথিশালা স্থাপিত হইতেছে, পুষ্করিণী খনন চলিতেছে, গুরুমহাশয় শুভংকরী কষাইতেছেন, টোলে শাস্ত্র-অধ্যাপনা বন্ধ নাই, চন্ডীমন্ডপে রামায়ণ পাঠ হইতেছে এবং কীর্তনের আরাবে পল্লি প্রাঙ্গণ মুখরিত। সমাজ বাহিরের সাহায্যের অপেক্ষা রাখে নাই এবং বাহিরের উপদ্রবে শ্রীভ্রষ্ট হয় নাই।
( আত্মশক্তি/ স্বদেশি সমাজ)

প্রবন্ধ উদ্ধৃতি — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর– স্বদেশ, স্বাধীনতা ও আমরা। [ পর্ব–০১]

“স্বদেশ, স্বাধীনতা ও আমরা ” — র বাইরে আরও সাতাশটি বিষয়ে ( সাহিত্য, দর্শন, বিশ্বপ্রকৃতি, অভিনয়, আধুনিকতা, ধর্ম ইত্যাদি ইত্যাদি) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তা আমরা তুলে ধরতে চেষ্টা করবো আমাদের এই ব্লগের মাধ্যমে। তবে কেউ যদি সবটাকে একসাথে পড়তে চান তাহলে
” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক প্রবন্ধ উদ্ধৃতি সংকলন”— এই গ্রন্থটি সংগ্রহ করতে পারেন।

 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর– স্বদেশ, স্বাধীনতা ও আমরা – পর্ব – ০৩

( কলেজ স্ট্রিটের- বইচিত্র, ধ্যানবিন্দু প্রভৃতি বইয়ের দোকানে পাওয়া যায় )

এছাড়া, পাঠ শুনতে পারেন- ” ANUP BANDYOPADHYAY ” YOUTUBE CHANNEL- এ । সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ, রাম বসু, যাত্রা সম্রাট শান্তি গোপাল ইত্যাদি তথ্য চিত্রও দেখতে পারেন।

আগামী পর্বে আমরা অন্য আরেক পর্যায় আরম্ভ করবো।

নমস্কার।

ads1-728x90

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *